সমুদ্রের অন্ধকার গভীরতায়, মাটির স্তরের নিচে লুকিয়ে ছিল এক বিস্ময়কর প্রাণ Sukunaarchaeum mirabile এটি এমন এক অতি ক্ষুদ্র জীবাণু, যার আবিষ্কার বিজ্ঞানীদেরকে জীবনের শুরুর ইতিহাস বুঝতে সাহায্য করছে। 
আদিম জীবনের জীবন্ত প্রমাণ হিসেবে ২০২৪ সালে জাপানের গবেষকেরা এই অদ্ভুত জীবাণুটিকে আবিষ্কার করেন। এটি একটি আর্কিয়া (Archaea), যা এক ধরনের প্রাচীন এককোষী প্রাণী। এদের এক বিশেষ শাখা আসগার্ড আর্কিয়ার (Asgard archaea) অন্তর্ভুক্ত Sukunaarchaeum। যাদের ধরা হয় আধুনিক জটিল কোষবিশিষ্ট জীবদের (যেমন মানুষ, গাছপালা, প্রাণী) পূর্বপুরুষ হিসেবে। 
আকারে ক্ষুদ্র কিন্তু তাৎপর্যে বিশাল এই Sukunaarchaeum এতটাই ছোট যে এর দৈর্ঘ্য মাত্র ১০০ ন্যানোমিটার যা সাধারণ আর্কিয়ার তুলনায় প্রায় ১০ গুণ ছোট। এর মধ্যে এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিন নেই যা সাধারণ জীবদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয়। উদাহরণস্বরূপ, এটি নিজে থেকে অ্যামিনো অ্যাসিড বা নিউক্লিওটাইড তৈরি করতে পারে না। এই সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও Sukunaarchaeum একা নয় এরা অন্য আর্কিয়ার সঙ্গে জৈব সম্পর্ক গড়ে তোলে। মাইক্রোস্কোপে দেখা গেছে, এটি শুড় বা "টেনট্যাকল" এর মতো অংশ দিয়ে তার প্রতিবেশী কোষের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি সংগ্রহ করে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এমন সহাবস্থানই হয়তো জটিল কোষ (Eukaryote) গঠনের প্রথম ধাপ ছিল।
বিজ্ঞানীদের মতে সাধারণ এককোষী জীব থেকে জটিল কোষ গঠনের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য তত্ত্বটি হল এন্ডোসিমবায়োসিস থিওরি (Endosymbiosis theory), যেখানে বলা হয় একটি প্রাচীন কোষ অন্য একটি ছোট কোষকে গিলে ফেলে এবং ধীরে ধীরে তাকে স্থায়ী অঙ্গানু হিসেবে গড়ে তোলে (যেমন মাইটোকন্ড্রিয়া)। Sukunaarchaeum mirabile-র আচরণ ও গঠন এই তত্ত্বকে বাস্তব উদাহরণে রূপান্তর করতে পারে, যা আমাদের জীবনের শেকড় বোঝার ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত খুলে দেয়।
"Sukunaarchaeum" নামটি এসেছে জাপানের পৌরাণিক গ্রন্থে বর্ণিত এক ছোট কিন্তু শক্তিশালী দেবতা সুকুনা-হিকোনা-র নাম থেকে। আর "mirabile" লাতিন শব্দ, যার মানে “অবিশ্বাস্য” বা “বিস্ময়কর”। এক কথায়, এই ক্ষুদ্র জীবাণুটি নিজের আকারে ক্ষুদ্র হলেও, তার তাৎপর্য বিশাল।
আমরা যখন জীবনের খোঁজে মহাকাশের দিকে তাকাই, তখন মাঝে মাঝে চোখ এড়িয়ে যায় পৃথিবীর গভীরের প্রাণেরা। Sukunaarchaeum হলো এমনই এক প্রাণী যা আমাদের ইতিহাসের অমূল্য অংশ। এটি কেবল একটি জীবাণু নয় এটি একটি জীবন্ত টাইম মেশিন, যা আমাদের নিয়ে যায় কোটি কোটি বছর আগের পৃথিবীতে, যেখানে জীবনের প্রথম ধাপগুলো গৃহীত হয়েছিল।
জানার আগ্রহ রাখুন কারণ জীবনের গল্পটা এখনও শেষ হয়নি।
0 Comments